আসুন সবাই সচেতন হই।
করোনা ভাইরাস বা কভিড-১৯ মহামারী চক্রবৃদ্ধি হারে ছড়ায়, যা আমরা এই সপ্তাহে বাংলাদেশে চাক্ষুষ প্রমাণ দেখব। ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। অনুগ্রহ করে বাড়িতেই থাকুন। এই মহামারী ছড়ানো রোধে আমাদের ব্যাক্তি পর্যায়ে এতটুকু করা খুবই সহজ।
আমাদের জীবদ্দশায় এইরকম পরিস্থিতি নজিরবিহীন। এই বৈশ্বিক মহামারী প্রতিহত করতে আমাদের সবাইকে সত্যিই একটি জাতি- মানবজাতি হিসেবে কাজ করতে হবে। প্রারম্ভিক পর্যায়ে পরিচ্ছন্নতা ও সচেতনতা এই রোগকে প্রতিরোধ করলেও এখন আমাদের পরিচ্ছন্নতার সাথে সাথে ধৈর্যশীল ও সহমর্মী হতে হবে। এই দুর্যোগের আপাত অবসানের পর আসবে অর্থনৈতিক সংকট। সেই সময় আমাদের সকলকে সকলের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়াতে হবে।
পরিচ্ছন্নতা
অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে রোগ জীবানু বেশি ছড়ায়। করোনা থেকে বাঁচতে আমাদের ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে এখন গুরুত্ব দিতে হবে।নিজেকে এবং নিজের পরিবেশকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নির্দেশনা অনুসারে সকলের উচিত একটু পর পর নিজের হাত মুখ ভালো করে অন্তত ২০ সেকেন্ড সময় সাবান দিয়ে ধুয়ে নেয়া। সাবান ঘন ঘন ব্যবহারের ফলে হাতের চামড়া খসখসে হয়ে চামড়ার খাঁজে জীবাণু আটকে থাকার সম্ভাবনা থাকে। তাই হাত ধুয়ে লোশান লাগিয়ে নিলে ভাল। নখ কেটে ছোট রাখুন যাতে নখের ফাঁকেও জীবাণু আটকে না থাকতে পারে।
বিশেষ কোন জরুরী প্রয়োজনে বাসার বাইরে বের হলে, বাসায় ফেরা মাত্রই জামা কাপড় পরিবর্তন করে তা ধোয়ার ব্যবস্থা করুন এবং সাথে সাথেই সাবান ব্যবহার করে গোসল করে নিন। যদি এখন বাড়িতেই থাকেন, তবুও প্রতিদিন নিয়ম করে অন্তত একবার জামাকাপড় পরিবর্তন করে নিন। সারাদিনের ক্লেশ ও বর্তমান পরিস্থিতির উদ্বেগ কাটবে। আপনার ব্যবহৃত জামাকাপড় সাবান দিয়ে বেশ খানিকক্ষণ ভিজিয়ে তারপর ধুয়ে পরিষ্কার করে রোদে শুকাতে দিন।
বাসা থেকে বের হবার সময় যদি আপনার সর্দিকাশি থাকে, তাহলে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করবেন। যেখানে সেখানে পানের পিক, কফ, থুতু ফেলা থেকে বিরত থাকুন। এতে আপনার কোন রোগ অন্যকে সংক্রামিত করতে পারবে না। এছাড়াও ব্যক্তিগত সুরক্ষার জন্য ভালো মাস্ক ব্যবহার করা প্রয়োজন। বাড়িতে ফিরে মাস্ক সাবান পানিতে ভিজিয়ে রেখে সহজেই করোনা মুক্ত করা সম্ভব। হাঁচি বা কাশি দেয়ার সময় আপনার কনুই দিয়ে মুখ ঢেকে নিন এবং সম্ভব হলে সাথে সাথে হ্যান্ডস্যানিটাইজার বা হ্যান্ড রাব দিয়ে হাত পরিষ্কার করে নিন।
দরজার হাতল, লিফটের বাটন, মোবাইল, কম্পিউটার, রিমোট, সুইচ, টেবিল-চেয়ারসহ দৈনন্দিন যে সকল ফার্নিচার বার বার ব্যবহৃত হয়, সেগুলো নিয়মিত জীবাণুমুক্ত করুন। বাসায় ঢোকার দরজার পাপোষে ব্লিচিং পাওডার দিয়ে রাখতে পারেন অথবা পানির সাথে ব্লিচ মিলিয়ে স্প্রে করতে পারেন। এতে পাপোষ জীবাণুমুক্ত হবে।
প্রতিদিনের আবর্জনা প্রতিদিন পরিষ্কার করুন। এই অভ্যাসগুলো বর্তমান দুর্যোগেই কেবল আপনাকে সাহায্য করবে না, বরং ভবিষ্যতেও আপনাকে অনেক রোগের হাত থেকে রক্ষা করবে।
সহমর্মিতা
করোনা ভাইরাসের কারনে আমরা সকলেই একটি দুঃসময় পার করছি। যে কোন বিপদে বা জাতীয় দুর্যোগ মোকাবেলা করার জন্য প্রয়োজন সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা। একে অন্যের প্রতি সহযোগিতা এবং সহমর্মিতা যে কোন সমস্যা মোকাবিলায় খুবই গুরুত্বপূর্ন ভুমিকা রাখে।
আমাদের সকলকে চেষ্টা করতে হবে যার যার অবস্থান থেকে অন্যকে সাহায্য করা। তবে আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে, আমি যা অন্যের ভাল হবে বলে ভাবছি, তা তাঁর জন্য বিব্রতকর হতে পারে। আমাদের ধৈর্যশীল ও সহমর্মী হতে হবে। নিজেকে অন্যের অবস্থানে রেখে বিবেচনা করতে হবে আবার নিজের সামর্থ্য ও যোগ্যতা মাথায় রেখে সাহায্যের হাত বাড়াতে হবে। একজনকে সাহায্য করতে যেয়ে আমরা যেন অন্য কারো প্রচেষ্টা পণ্ড না করি বা কোন অপারগতায় অন্যকে মাঝপথে ঝামেলায় না ফেলি।
করোনা ভাইরাসের কারনে আমরা সকলেই একটি ভয়াবহ দুর্যোগের মুখে আছি। এই দুর্যোগ প্রতিহত করতে শারিরীক দুরত্ব বা সামাজিক দুরত্ব অন্যতম কার্যকরী ব্যবস্থা। ফলে অনেকেই যে যার মত করে নিজের পরিবারের কথা ভেবে নিরাপত্তা গ্রহন করছেন। আমাদের সকলকে এই সময়ে অন্যের সিদ্ধান্তকে সম্মান জানাতে হবে। কারো আচরনে যদি আপনি কষ্টও পান, সেটা ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে সকলের দৃষ্টিভঙ্গি এক নয়, সবাই সব জিনিস সমানভাবে নাও বুঝতে পারেন, আমাদের কে ধৈর্য ধরে যে কোন প্রতিকূলতা, মানুষের বেঁচে থাকার আকুতির নামে বিভিন্ন আচরনকে সহজ ভাবে নিতে হবে।
এই ধরনের দুর্যোগকালীন সময়ে নিজেদের মানসিক স্বাস্থ্যের দিকেও নজর দিতে হবে। অযাচিত দুঃশ্চিন্তা আক্তান্ত হয়ে বা শোঁকাহত হয়ে অনেকেই ভুল সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, এমনটা যেন না হয়। একলা এই বিপদ থেকে আমাদের মুক্তি মিলবে না, আমরা সবাই ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করলেই এই বিপদ কেটে যাবে। তাই নিজের বাড়িতে বসে আসুন আমরা আগামী দিনের পরিকল্পনা করি, নিজেকে এবং পরিবারকে সময় দেই, পুরানো বন্ধুদের খোঁজ নেই।
সহযোগিতা
চলমান মহামারীর কারনে বিশ্বজুড়ে চাকরী হারাচ্ছে হাজারো মানুষ। বাংলাদেশেও অনেকে বেকারত্বের মুখোমুখি হবেন। তাই আমাদেরকে এখন থেকেই প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে। আপনি আমি হয়ত ক্ষতিগ্রস্থ মানুষদের মুখে দুই একবেলা খাবার পৌঁছে দিতে পারব কিন্তু এতে সমস্যার সমাধান হবে না। বরং সবাইকে কর্মক্ষম করে গড়ে তোলা এবং সকলের কর্মসংস্থান করাই হবে আমাদের মহামারী পরবর্তী চ্যালেঞ্জ। মহামারী পরবর্তী সময়ে আমাদের অবশ্যই দেশীয় উদ্যোক্তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে, দেশীয় পন্য কিনতে হবে। এতে দেশের মধ্যে অর্থ সঞ্চালন অব্যাহত থাকবে এবং অর্থনীতি ধীরে ধীরে স্থিতিশীল হবে।
সামনে সত্যিই খুব খারাপ সময়, তাই আসুন ধৈর্য ধরার প্রস্তুতি নেই আর আশায় বুক বাঁধি যে আমরা নিশ্চয়ই পারব।
Share
←
→
Comments