বারান্দা ও শহুরে জীবনের গুরুত্ব
ইদানিং এই শহরের কাউকে যখন জিজ্ঞেস করা হয়, বারান্দা কি? একটা বড় অংশ জবাব দেয় – বারান্দা হল কাপড় শুকানোর জায়গা। জবাবটা শুনে আমরা খুব দুঃখিত হই।
বর্তমান নগরজীবনে স্থান সংকুলানের সংকট এমনি দাঁড়িয়েছে যে, এখানে বারান্দার মত খোলা জায়গাকে ব্যবহার করা হয় শুধু মাত্র কাপড় শুকানো জন্য অথবা পুরানো, অকেজো কোন জিনিস লুকিয়ে রাখার জন্যে। অথচ একটা সময় ছিল যখন পরিবারের সকলেই বারান্দায় দিনের কিছু অংশ কাটাতো। মায়ের আচার শুকাতেন, বাবারা খবরের কাগজ পড়তেন, বোনেরা চুল শুকাতো, ভাইয়ারা লুকিয়ে রাতে সিগারেট খেতো। আমাদের জীবনধারার সাথে প্রকৃতি ও পরিবেশ যুগ যুগ ধরে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। গ্রাম বাংলায় ঘর থেকে লোকে উঠানেই বেশি সময় কাটায়। সেই উঠানেরই শহুরে বিকল্প - বারান্দা।
বর্তমানের অপরিকল্পিত নগরায়ন, ভবন নির্মান পরিকল্পনার ত্রুটি অনেক ক্ষেত্রেই মানুষকে বারন্দা বিমুখ করেছে। তাছাড়া শহুরে জীবনের গতি বৃদ্ধি পেলেও, কমে যাচ্ছে একে অন্যের সাথে যোগাযোগ। প্রাইভেসী রক্ষার খাতিরে হয়ত আরেক বাসার মুখোমুখি বারান্দায় প্রবেশ আপনাআপনি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আর সেই সাথে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ইট পাথরের ভীড় ঠেলে একটুকরো নীল আকাশ দেখার সুযোগ। অথচ আমরা চাইলে, আমাদের বাসার এই গুরুত্বপূর্ন অংশটিকে দৈনন্দিন জীবনের একটি অংশ হিসেবে তৈরী করে নিতে পারি। আপনার বারান্দাই হতে পারে, এই কংক্রীটের জঙ্গলে এক চিলতে সুখ।
আপনার বাসার বারান্দার মুখোমুখি যদি অন্য বাসার বারান্দা বা অন্য কোন অংশ থাকে, তাহলে সবার আগে প্রয়োজন কিছুটা প্রাইভেসীর ব্যবস্থা করা। এতে বারান্দা ব্যবহারের ক্ষেত্রে মানসিক স্বস্তির বিষয়টি নিশ্চিত হবে। এই প্রাইভেসীর ক্ষেত্রে সবচেয়ে কার্যকরী হতে পারে বিভিন্ন লতানো গাছ। অপরাজিতা ফুলের গাছ খুব সহজেই অল্প মাটিতে ও অল্প যত্নে বাড়ে। তাই বারান্দার এক কোণে একটি টব বা ছোট ড্রামে লাগিয়ে বারান্দার গ্রিলে লতা তুলে দিতে পারেন। খুব অল্প সময়েই একটি আড়াল তৈরি হবে। যদি বারান্দায় গ্রিল না থাকে বা গ্রিল ব্যবহারে বাঁধা থাকে, তবে *বহু থেকে নিতে পারেন বারান্দার পার্টিশন। আমাদের দুই রকমের বারান্দার পার্টিশন রয়েছে। একটি মাত্র ৮” জায়গা নিয়ে আপনাকে আড়াল তৈরিতে সাহায্য করবে, অন্যটির নিচে একটি বাক্স আছে যেখানে আপনি কিছু স্টোর ও করতে পারবেন আবার এর উপর বসতে পারবেন। *বাজারে এধরনের অন্য কোন পণ্য আমাদের চোখে পড়েনি বলেই আমাদের পণ্যের কথা এখানে আলাদা করে বলা হল।
বারান্দায় যেহেতু কিছু সময় অবসরে, নিভৃতে কাটাতে ভাল লাগে, তাই বারান্দায় একটু বসার জায়গার ব্যবস্থা করুন। ছোট বারান্দায় রাখুন দুইটি টুল বা মোড়া। বারান্দার আকারের সাথে সামঞ্জস্য রেখে একটি ইজি চেয়ার ও সাইড টেবিল রাখতে পারেন। সাথে মাটিতে পেতে দিন পাঁটের বা বাঁশের তৈরি কোন পাটি। প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি যেকোনো পণ্যই আপনি বারান্দায় রোঁদে ব্যবহার করতে পারবেন। শুধু খেয়াল রাখতে হবে বৃষ্টিতে না ভিজে যায়। বৃষ্টিতে ভিজলে যে খুব সমস্যা তাও না, কেবল ভাল করে আবার রোঁদে শুকিয়ে নিয়ে ব্যবহার করা উচিত।
আপনার শখের কাজ গুলো বারান্দাতে বসেই করুন। এতে দিনের কিছুটা সময় খোলা বাতাসে কাটানো হবে। যোগ ব্যায়াম করতে পারেন, বই পড়তে পারেন, বাগান করতে পারেন, পোষা প্রাণীর ঘর থাকতে পারে, গলা সাধতে পারেন বা বাদ্যযন্ত্র বাজাতে পারেন। এ কাজ গুলোর কোনটাতেই কারেন্টের প্রয়োজন হয় না, তাই বারান্দায় দিনের আলো থাকতে থাকতে সহজেই করা যায়। শখের জিনিস গুলো হাতের নাগালে রাখার জন্য দেয়ালে কিছু তাক লাগিয়ে নিতে পারেন। বারান্দায় আমরা অনেক জিনিস স্টোর করি, কিছু বাক্সে জিনিস গুছিয়ে রেখে তার উপর কুশন দিয়ে সহজেই বারান্দায় বসা যায়।
বারান্দায় আমরা কাপড় শুকাই, যা অবশ্যই একটি দরকারি কাজ। তাই বলে পুরো বারান্দা শুধুমাত্র কাপড় শুকানোর কাজে ব্যবহার না করে অন্যান্য প্রয়োজনেও ব্যবহার করা উচিত বলে আমরা মনে করি। তাই বারান্দায় লাগিয়ে নিন প্রয়োজন মত রিট্রাকটেবল ওয়াশিং লাইন বা ফোলডিং কাপড় শুকানোর র্যাক যা আপনি ব্যবহার শেষে সরিয়ে রাখতে পারবেন।
সন্ধ্যার পর বারান্দায় বসতে হলে বারান্দায় নেট লাগিয়ে নিন। গাঁদা ফুল গাছ ও তুলসী গাছ লাগাতে পারেন, মশা আসবে না। মাটির কয়েল দানিতে কয়েল বিকেল বেলা থেকে দিয়ে রাখলে মশার উপদ্রব কম হয়। এছাড়াও লেটুস, টমেটো, কারি পাতা, পুদিনা, ধনে ও মরিচ গাছ লাগাতে পারেন। শুধুমাত্র কাজের জিনিস ছাড়াও বারান্দাকে আপনি বিভিন্ন ভাবে সাজিয়ে নিতে পারেন। বারান্দার কর্নারে কিছু ঝোপ জাতীয় গাছ রাখতে পারেন। টবদানি বা স্ট্যান্ডে এই ধরনের ঝোপ জাতীয় গাছ রাখতে পারেন। সাথে যুক্ত করে দিতে পারেন কিছু ব্যাটারি চালিত রঙিন লাইট। রাখতে পারেন একটা ছোট্ট এ্যাকুরিয়ামও। এটা একদিকে যেমন আপনার বারান্দার সৌন্দর্য বাড়াবে, আবার বাড়িতে বন্ধুদের সাথে আড্ডায় হবে সেলফি তোলার একটি চমৎকার জায়গা।
আমাদের শহুরে জীবনে স্বস্তি খুবই বিরল। একটি সাজানো গোছানো বারান্দা হতে পারে কংক্রিটের জংগলে একটু স্বস্তি, মুক্ত হাওয়া উপভোগের স্থান কিংবা আড্ডার জায়গা। সঠিক পরিকল্পনায় গোছানো একটি বারান্দা আপনার বাসার আকর্ষন আপনার কাছে বাড়িয়ে তুলবে বহুগুন!