ডিটার রামস-এর 'ভাল ডিজাইন'-এর জন্য দশটি মূলমন্ত্র
বাংলাদেশের মানুষের ঐতিহ্য, রুচিবোধ, গৃহসজ্জা এবং আসবাবপত্র ব্যবহারের সংস্কৃতির সাথে আন্তর্জাতিক মানের সমন্বয় ঘটিয়ে নতুন ধারার নকশা ও কারুকাজ নিয়ে কাজ করে বহু বাংলাদেশ। তাই আমরা আনন্দের সাথে সবাইকে জানাতে পারি – বহু বাংলাদেশের জন্য ডিজাইন করে।
ডিটার রামস (Dieter Rams) একজন দক্ষ ডিজাইনার যিনি তার সহজ নকশা বিন্যাস বা ডিজাইনের জন্য বিখ্যাত। তার মতে অপ্রয়োজনীয় জটিল নকশা বা ডিজাইন যে কোন পন্যের গ্রহনযোগ্যতা ও কার্যকারীতাকে ক্ষুণ্ণ করে। তিনিই প্রথম ধারনা দেন যে প্রতিটি ডিজাইনই স্থিতিশীল অগ্রগতি (sustainable development) দ্বারা উন্নত করা যায়। তাঁর লেস বাট বেটার (less but better) অর্থাৎ ‘সীমিত কিন্তু সেরা’ বা পরিশীলিত ধারনার ভিত্তিতে করা অনেক নকশা কালজয়ী ও ব্যতিক্রমী হিসেবে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। জার্মান এই নকশাবিদ সহজ ও মানসম্মত ডিজাইন কিভাবে করা যায় তা নিয়ে দশটি গুরুত্বপূর্ন দিক নির্দেশনা দিয়েছেন, যা ডিটার রামসের টেন প্রিন্সিপল ফর গুড ডিজাইন হিসেবে বহুল পরিচিত। চলুন এই দশটি মূলমন্ত্র সম্পর্কে জানি :
১। উদ্ভাবনোন্মুখ :
নতুনের অন্বেষণ কখন থেমে যাওয়ার নয়। প্রযুক্তি প্রতিনিয়ত অগ্রসর হচ্ছে, তার সাথে আমাদের জীবন ধারা বদলাচ্ছে, আর সেই সাথে প্রচলিত ডিজাইন বা সমাধানকে নতুনভাবে দেখার সুযোগ তৈরি হচ্ছে। তাই যেকোনো ডিজাইন উন্নত প্রযুক্তি প্রবর্তনের সাথে সাথে নতুনভাবে উদ্ভাবিত হতে হবে। প্রযুক্তির উন্নয়নের সাথে ডিজাইনের পরিবর্তন বা সমৃদ্ধি একটি চলমান প্রক্রিয়া।
২। ব্যবহার উপযোগী :
আমরা যে কোন কিছু ব্যবহারের উদ্দেশ্যেই ক্রয় করে থাকি। একটি পণ্যের কার্যকারিতা শুধু যথেষ্ট নয়, বরং পণ্যটি ব্যবহারকারির উপর কি ধরনের মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব ফেলে তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভাল ডিজাইন একটি পণ্যকে কেবল ব্যবহার উপযোগী করে না, সাথে এর কার্যকারিতা হ্রাস করতে পারে এমন বৈশিষ্ট্যসমূহকে খর্ব করে।
৩। নান্দনিক :
আমরা সর্বক্ষণ কোন না কোন পণ্য ব্যবহার করে থাকি। এর বাহ্যিক গঠন বা নান্দনিক সৌন্দর্য পরোক্ষভাবে হলেও আমাদের মনকে প্রভাবিত করে। একারণে যেকোনো পণ্য ব্যবহার উপযোগী হতে হলে অবশ্যই নান্দনিকও হতে হবে। তাই ভাল ডিজাইন অবশ্যই সুদর্শন, সুন্দর।
৪। সহজবোধ্য :
যেকোনো পণ্যের ডিজাইন এমন হওয়া উচিত যাতে ব্যবহারকারি সহজেই এর ব্যবহারবিধি ও কার্যকারিতা সম্পর্কে ধারনা করতে পারেন। ব্যবহারকারির সহজাত প্রবৃত্তি কে মাথায় রেখে ডিজাইন করার কারণে ভাল ডিজাইন সহজবোধ্য।
৫। প্রচ্ছন্নতা :
ডিজাইনকৃত যেকোনো কিছুর সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য থাকে; শুধুমাত্র অলংকার কিংবা শৈল্পিককর্ম হিসেবে একে দেখার কোন সুযোগ নেই। ভাল ডিজাইন তাই মার্জিত ও পরিশীল, যা নেপথ্যে অবস্থান করে তার ব্যবহার বা ব্যবহারকারিকে মুখ্য হিসেবে উপস্থাপন করে।
৬। সৎ ও অকপট :
ডিজাইনের সাহায্যে যেকোনো পণ্যকে আপাতদৃষ্টিতে বাস্তবের তুলনায় অনেক বেশি অভিনব বা মূল্যবান করে উপস্থাপন করা সম্ভব। তবে ভাল ডিজাইন কখনই নিজেকে বাড়তি মূল্যায়ন করে না। ভাল ডিজাইন সবসময় অকপট এবং সৎ।
৭। কালজয়ী :
জনপ্রয়িতা পাওয়ার আশায় ডিজাইনকৃত পণ্যের চাইতে প্রত্যাশা পূরণ করে এমন পণ্যের কদর অনেক বেশি। এর উপযোগিতা কালজয়ী তাই মানুষ এধরনের পণ্য দীর্ঘ সময় ধরে ব্যবহার করে।
৮। সুচিন্তিত :
একটি পণ্যকে সার্বিক ও পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে ডিজাইন করতে হলে এর কোন অংশই দৈবাৎ বা অযৌক্তিক ভাবে নির্ধারিত হতে পারবে না। ভাল ডিজাইনের প্রতিটি পদক্ষেপ সুচিন্তিত।
৯।পরিবেশ বান্ধব :
পরিবেশ সংরক্ষনে একটি পন্যের ডিজাইন গুরুত্বপূর্ন অবদান রাখতে পারে।একটি ভালো ডিজাইনের কারণে সম্পদের সাশ্রয় যেমন হয় তেমনি এর সহজাত বৈশিষ্ট্গুলোর জন্য বিভিন্ন প্রকার অনাবশ্যক দূষণ তৈরি হয় না।
১০। অনাড়ম্বর :
ভাল ডিজাইন সহজ ও যথোচিত, যা পণ্যটির প্রয়োজনীয় গুনগত মান বর্ধন করে অথচ অপ্রয়োজনীয় নকশার ভারে জর্জরিত করে না।