বর্তমান প্রেক্ষিতে মাডরুমের প্রয়োজনীয়তা
গত কয়েকদিন ধরে শায়লা খুবই ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে। বাসার প্রয়োজনীয় কাজ শেষ করেই কাগজ কলম নিয়ে বসছে এবং ইন্টারনেটে কি যেন খোঁজাখুঁজি করছে। জাহিদ ব্যাপারটিকে এতদিন ভেবেছে বুঝি রেসিপি সংক্রান্ত কোন ব্যাপার। কিন্তু আজকে সকালে সেই খাতাটা চোখে পড়তেই বুঝতে পারলো কি হতে যাচ্ছে। পুরো খাতা জুড়ে বাসা রি ডেকোরেশনের খসড়া নকশা এবং সম্ভাব্য খরচ।
চায়ের কাপ হাতে শায়লা বেডরুমে প্রবেশ করতেই দেখলো জাহিদ খাতা হাতে বসে আছে। বেচারার চোখে প্রশ্নবোধক চাহুনি দেখেই মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে ও বলল, দেখো এই বাসায় আমরা দীর্ঘদিন ধরে আছি। কিন্তু গত কয়েক মাসের মত টানা কখনই ছিলাম না। ফলে নিজেদের বাসা নিয়ে এত গভীরভাবে চিন্তা করার সুযোগ আগে কখনই হয় নি। ভেবে দেখলাম, বাসার ফার্নিচারগুলো কিছুটা এদিক সেদিক করে বা নতুন কিছু ফার্নিচার যোগ করলে পুরো বাসাটাই প্রায় বদলে যায়, সিস্টেমেটিক হয়ে উঠে।
চায়ের কাপে একটা চুমুক দিয়ে শায়লা বলল, এই যে দেখো তুমি গত কয়েক মাস ধরে বিছানার উপর বসে অফিসের কাজ করো, অথচ আমি ভেবে দেখলাম জানালার পাশে ছোট একটা টেবিল রাখলে তুমি পুরো কর্ণারটাকে অফিস হিসাবে ব্যবহার করতে পারো অথবা একটা পোর্টেবল ল্যাপটপ টেবিল কিনলে তুমি বিছানায় বসেই আরো সহজ করে কাজ করতে পারো।
জাহিদ মিথ্যে হতাশ হবার ভাব করে বলল, তুমি এত ক্রিয়েটিভ কিছু ভাবছ অথচ আমি ভেবেছিলাম তুমি ইন্টারনেট ঘেটে আমার জন্য বুঝি নতুন কিছু রান্নার মেন্যু বের করছ … ...
প্রিয় পাঠক, আমরাও চাইলে এই দম্পতির মত করে কিছুটা ভাবতে পারি। নিজের বাসা আমাদের সবারই প্রিয় জায়গা। কেননা দিন শেষে আমরাও পাখিদের মত এই ঘরেই ফিরে আসি। তাই সকলেই চেষ্টা করে তার সাধ্যমত নিজের ঘরটি সুন্দর করে সাজাতে। এই লকডাউনে আমরা দীর্ঘ সময় ধরে বাড়িতে থাকছি, পড়াশোনা থেকে শুরু করে অফিসের কাজ সবই এখন ঘরে বসে করতে হচ্ছে। আমরা যদি সময় বের করে একটু চিন্তা করি তাহলে আমাদের বাসাটাকে আরো সুন্দর ও কার্যকরভাবে সাজিয়ে ফেলতে পারি।
এই মুহুর্তে আমাদের সকলের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন হচ্ছে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এবং নিজেদের সচেতনতা বৃদ্ধি করা। ফলে যখনই আমরা জরুরী প্রয়োজনে বাইরে যাবো চেষ্টা করতে হবে বাসায় প্রবেশের আগেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হয়ে নেওয়া।
মাডরুম কি?
করোনা ভাইরাসের আক্রমণ থেকে আমাদের পরিবারকে সুরক্ষিত রাখতে আমরা বিভিন্ন উপায়ে আমাদের বাসস্থান পরিষ্কার রাখার চেষ্টা করছি। বাইরে থেকে আসা বাজার, চাবি, ব্যাগ ইত্যাদি বাসার দোরগোড়ায় রেখে বাসায় প্রবেশ করলে বাড়ি ও পরিবারকে নিরাপদ রাখা সম্ভব। বাড়িতে বাইরে থেকে নিয়ে আসা জিনিসগুলো বাইরে থেকেই জীবাণুমুক্ত করে ভিতরে নিয়ে আসলে এই মহামারীর প্রকোপ থেকে মুক্ত থাকার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।
এসময় বিভিন্ন দেশের "মাড-রুম" ধারনাকে আমাদের বাসার সামনে বাস্তবায়ন করে নিতে পারি। মাড-রুম সচারাচর বাইরে থেকে এসে জুতা, ভিজা কাপড়, ছাতা রাখার স্থান হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এতে ভিতরের বাড়িতে প্রবেশের আগে একটি অন্তরায় তৈরি হয় বলে বাড়ি পরিষ্কার রাখা সহজ হয়। এপার্টমেন্টের ক্ষেত্রে ফয়ার বা লিফট লবিকে মাড-রুম হিসেবে গুছিয়ে নেওয়া যায়।
কিভাবে বাড়িতে মাডরুম তৈরি করবেন?
আপনি বাসায় প্রবেশের মুখে ছোট একটি টেবিল কিংবা স্টো ব্যবহার করতে পারেন। যেখানে বিভিন্ন জীবানুনাশক জিনিসপত্র সহজেই রাখা যাবে। যদি আরো একটু বেশি জায়গা থাকে তাহলে ছোট একটা আলমারী বা একটা সিম্পল ক্যাবিনেটের কম্বো রাখতে পারেন। এই ক্ষেত্রে হ্যান্ড গ্লাভস, ফেস মাস্ক, মাথার ক্যাপ, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, সু কভার সহ ইত্যাদি জিনিস সহজেই সুন্দর করে গুছিয়ে রাখতে পারবেন। পাশে একটি ডাস্টবিন রাখতে পারেন, যেখানে আপনি ব্যবহৃত মাস্ক, গ্লাভসগুলো রেখে দিতে পারবেন। মনে রাখবেন যত্রতত্র মাস্ক ও গ্লাভস ফেলা উচিত নয়। এতে স্বাস্থ্যঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। এই করোনার সময়ও আমাদের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা কষ্ট করে কাজ করে যাচ্ছেন। তাদের নুন্যতম স্বাস্থ্য নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে আমরা ব্যবহৃত গ্লাভসগুলো কোন কাগজের ব্যাগে ঢুকিয়ে ডাস্টবিনে ফেলাই উত্তম।
আমরা অনেকেই বাসার প্রধান দরজার মুখে বা বাইরে জুতার বাক্স রাখি। আমাদের দেশে সাধারনত যে ধরনের জুতার বাক্স দেখা যায়, সেইগুলো খুব একটা জুতাবান্ধব নয়। আপনি নিশ্চয় অবাক হয়ে ভাবছেন, পরিবেশবান্ধব নাম শুনেছি জুতাবান্ধব আবার কি জিনিস? নিশ্চয়ই হাসি পাচ্ছে? আচ্ছা চলুন একটু হেসে নিয়ে ব্যাপারটা সম্পর্কে চিন্তা করি।
আমরা যখন কোন বদ্ধ আলমারীতে আমাদের দৈনন্দিন ব্যবহৃত জুতা রেখে দেই তখন সেখানে জন্ম নেয় নানা ধরনের ব্যাকটেরিয়া ও ফাঙ্গাস যা থেকে দুর্গন্ধ যেমন ছড়াতে পারে তেমনি নানা রকম চর্ম রোগও দেখা দিতে পারে। ফলে আপনি যে জুতার বাক্স ব্যবহার করবেন তা যেমন বদ্ধ থাকবে তেমনি সেখানে বাতাস চলাচলেরও সুযোগও থাকতে হবে। আমাদের মনে রাখা উচিত অনেক সময় একটি সাধারন ফার্নিচার বাসায় বসবাসরত মানুষের হয়ে কথা বলে, তাদের রুচিবোধ ও শিক্ষা সম্পর্কে ধারনা দেয়। তাই বাসায় প্রবেশের সময় যে সকল ফার্নিচার আপনি ব্যবহার করবেন তা যেন অবশ্যই যেন দৃষ্টিনন্দন এবং কার্যকরী হয়।
বর্তমান সময়ে খুব ভারী ফার্নিচারের চাইতে হালকা দৃষ্টিনন্দন ও কার্যকরী ফার্নিচারের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই চেষ্টা করুন বাসায় যত সম্ভব হালকা ফার্নিচার ব্যবহার করতে যা অপ্রয়োজনীয় জায়গা নষ্ট করবে না আবার আপনার প্রয়োজনও মেটাবে। “আমার বাসা খুব ছোট। আমি আর কি সাজাবো?”এই ধরনের মানসিকতা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। বাসা ছোট মানেই সেটা দৃষ্টিকটু নয়। বরং ছোট জায়গাকে মাথায় রেখেই আপনি তা সাজানোর চেষ্টা করুন। মনে রাখবেন ছোট বাসায় যথাসম্ভব ভারী ফার্নিচার ব্যবহার করবেন না। চেষ্টা করুন দেয়াল ব্যাবহার করতে। দেয়ালের কিছু তাক লাগিয়ে নিলে খুব অল্প পরিসরেই মাডরুম তৈরি করে নিতে পারবেন। এছাড়া এর উপর একটা বড় আয়না ব্যবহার করলে জায়গাটাকে বেশ বড় দেখাবে।
আমরা যেখানেই যাই না কেন, যাই করি না কেন নিজের বাসা আমাদের সবচেয়ে প্রিয় এবং শান্তির জায়গা। আর এই ঘর সাজানোর মুল বিষয়টি নির্ভর করে যার যার পছন্দ ও রুচির উপর। অনেক সময় পুরানো ফার্নিচারগুলো কিছুটা পরিবর্তন করেও ঘরে নতুন আবহ সৃষ্টি করা যায়। অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ফেলে দিয়ে কিছুটা জায়গা তৈরী করে দিতে পারেন নতুন এক রুপ। সবচেয়ে বড় কথা, সাজানো গোছানো ঘর মনে একটা অদ্ভুত প্রশান্তি এনে দেয় আর বর্তমান এই কঠিন সময়ে আমাদের একটু মানসিক প্রশান্তির ভীষন প্রয়োজন।